সকল হিন্দূ ধর্মাবলম্বী ভাই – বোনদের জানাই নমস্কার । বাংলা নিউজ ডিজিটালের পক্ষ থেকে সবাইকে জানায় স্বাগতম। আজকে আমরা আলোচনা করব আমাদের মালা জপ করা অবশ্য কর্তব্য কেন। তার আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে, আমাদের ধর্মের ইতিহাস সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আমাদের আজকের আলোচনা।
ইতিহাস: পৃথিবীর সবচেয়ে আদি ধর্ম হলো সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম। ধারণা করাহয় প্রাচীন হিন্দু নদের তীরে রে গড়ে ওঠে আজকের এই সতাতন বা হিন্দু ধর্ম। হিন্দু দের আদি গ্রন্হ হলো বেদ। বেদ হলো হিন্দু ধর্মের মুল ভিত্তি।
এখন আসুন জানা যাক কিছু কথা:
১. জপ কি ?
একান্ত নিরিবিলি বসে কারো নাম স্মরণ করাকেই জপ বলা যায়। এখানে জপ করা বলতে এই জগতের সৃষ্টি কর্তা অনাদি আদি ভগবানের নাম স্মরণ করাকে বোঝানো হয়েছে
২. জপ মালা কি ?
জপ মালা হলো ভগবানকে স্মরণ করার জন্য ১০৮ টা গুটি দ্বারা নিম/বেল / তুলসী কাঠ দিয়ে তৈরীর করা যে মালা ব্যবহার করা হয় তাকে জপ মালা বলে ।
৩. জপ করার জন্য কী কী প্রয়োজন?
জপ করার জন্য আপনার প্রয়োজন একটি জপমালা , শ্রী গুরুর প্রণাম মন্ত্র, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম এগুলো জানলেই আপনি জপ করতে পারবেন ।জপের জন্য মহাপ্রভু কোনো বিধি নিষেধ দেন নি । আপনি যেকোনো অবস্থাতেই জপ করতে পারেন।
জপমালা আপনি আপনার আশেপাশের ইসকন/ মন্দির থেকে সংগ্রহ করবেন ।কিভাবে জপ করবেন সেটা নিচে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
৪ . জপ কেন করবেন :
আমরা জানি সব কিছুর ই একজন স্রষ্টা আছেন । তেমন : একজন কাঠমিস্ত্রি চেয়ার, টেবিল, আলমারি ইত্যাদি বানায় অর্থাৎ এগুলোর স্রষ্টা একজন কাঠমিস্ত্রি। তেমন ই আপনার-আমার একজন স্রষ্টা আছেন ।তিনি এই পৃথিবীতে সকল কিছুর সৄষ্টি করেছেন।
এই আকাশ,বাতাস ,মাটি, মানুষ,প্রাণি সকল কিছুর।তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।তিনি সুষ্ঠুভাবে সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাদের উচিত স্রষ্টাকে খুশি করা ।আর স্রষ্টাকে খুশি করার উপায় হলো তার গুণকীর্তন করা।
মহাপ্রভু বলেছেন:
শুন মিশ্র কলিযুগে নয় তপ যজ্ঞ
যেই ভজে কৃষ্ণ নাম তার মহাভাগ্য।
হিন্দু ধর্মে ৪ টি মুখ তথা : সত্য ,ত্রেতা,দ্বাপর ,করি। স্ত্রীর,ত্রেতা,দ্বাপর যুগে মানুষের জীবনকাল ছিল এখন কারতুলনায় অনেক বেশী। তখনকার উদ্ধারের জন্য ছিল তপ-জপ ই একমাত্র উপায় । কিন্তু এই কলি যুগে মানুষ এতটাই ব্যস্তযে তার দ্বারা তপস্যা করা সম্ভব নয়।
এজন্য মহাপ্রভু আমাদের কলির জীবের উদ্ধারের জন্য সহজউপায় এনে দিয়েছে সেটা হলো মহামন্ত্র জপ । একমাত্র হরি নামের মাধ্যমেই কলির মুখে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব।
৫. কেন আমাদের জপ অবশ্য কর্তব্য:
আমাদের জীবনটা আমরা সুখের মনে করলেও এখানে প্রকৃত পাওয়া যায় না। আমাদের এখানে বারংবার জন্ম- মৃত্যু হয় ।আমাদের বার বার এই পৃথিবীতে আসতে চায় চিরমুক্তি না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য চিরমুক্তি ।
আর চির মুক্তি লাভের উপায় হলো ভগবানকে স্মরণ করা তার নাম গুণ- কীর্তন করা। তার সেবা পূজা করা। আর তার নাম গুণ- কীর্তন ও সেবা পূজা করার জন্য জপ উত্তম পন্থা তাই আমাদের জপ অবশ্য কর্তব্য।
এখন আমরা কিভাবে এই দুঃখ থেকে মুক্তি পাব:
একমাত্র হরি নাম ই আমাদের এই দুঃখ বেদনা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। একবার ভাবুনতো ভগবান আপনার দুটো হাত দিয়েছেন সেই হাত দিয়ে যদি ভগবানের সেবা না হয় তাহলে সেই হাত পঙ্গু মানুষের সমতুল্য। তাই আসুন আমরা সবাই ভগবানের নাম কীর্তন ও আজ থেকেই জপ শুরু করি।
৬. কিভাবে জপ করতে হবে :
প্রথমে আপনি জপমালাটি হাতে নিন। এর পর জয় শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রী অদৈত গদাধর শ্রী বাস আদি গৌর ভক্তবৃন্দ কি জয় বলে। বড় পাশের গুটি থেকে শুরূ করুন হরে কৃষ্ণ ,হরে কৃষ্ণ ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে, হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম, হরে হরে এই মহামন্ত্র জপ করে।
প্রতিটি খুঁটিতে এক একবার পুরো মহামন্র জপ করে তারপর অন্য খুঁটিতে যাবেন।এইভাবে য-খন আপনার একে একে ১০৮ টা গুটিতে সম্পূর্ন জপ করা হয়ে যাবে তখন আপনি মামলাটি উল্টিয়ে নিন অর্থাৎ ছোট গুটির পাশথেকে শুরু করে আগের নিয়মে বড় পাশে ফিরে আসুন।
আপনি কত মালাজপ করবেন : আমাদের কমপক্ষে ১৬ মালাজপ করার কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে । কিন্তু আপনি যদি নতুন ভক্ত হন তাহলে আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ মালা নিয়মিত জপ করূন।এবং আস্তে আস্তে আপনার জটের পরিমান বৃদ্ধি করুন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।.
ছবি: জপমালার (সংগৃহীত)